দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানানো হয়।
কিম ইয়ং-হিউনের জায়গায় নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন সৌদি আরবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত চোই বিয়াং-হিয়াক। ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় সাবেক সেনা জেনারেল চোই-এর মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে।
সামরিক আইন জারির পর দেশজুড়ে উত্তাল বিক্ষোভ এবং ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল হঠাৎ করে সামরিক আইন জারি করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর বিক্ষোভের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ইউনের টেলিভিশন ভাষণের পরই আইনপ্রণেতা এবং সাধারণ নাগরিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পার্লামেন্ট ভবনে সেনাবাহিনী প্রবেশের চেষ্টা করে, তবে আইনপ্রণেতারা তাদের প্রতিহত করেন। সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিমকেই দায়ী করা হয়। কিম নিজেও স্বীকার করেন যে, এই পদক্ষেপ তার পরামর্শে নেওয়া হয়েছিল।
সামরিক আইন প্রত্যাহার হলেও দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। বিরোধী দলের একটি জোট প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। আগামী শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পত্রিকা চুসান ইলবো।
প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টি সামরিক আইন জারিকে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ বলে উল্লেখ করেছে। তারা প্রেসিডেন্ট ইউনের পদত্যাগ দাবি করছে। বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ এবং অভিশংসনের চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট ইউন গভীর সংকটে পড়েছেন।
চোই বিয়াং-হিয়াককে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। চোই একজন অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নীতিপরায়ণ কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত। চাং জিন-সুক, প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ, চোইকে একজন দায়িত্বশীল ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই সামরিক আইন জারি এবং এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন। এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশ এখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত। বিক্ষোভ এবং অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সামরিক আইন জারি এবং তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেশটির সরকার ও প্রেসিডেন্ট ইউনের নেতৃত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কার্যক্রম কীভাবে প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।